২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনের সূত্র ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। তবে বিষয়টি আসলে তা নয় বলে আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল, এটা তাদের একটা রুটিন প্রজ্ঞাপন। এখানে কোনো জায়গায়, কোনো কোডে ফ্রিল্যান্সারদের ১০ শতাংশ কর দিতে হবে এ রকম কিছুর উল্লেখ নেই। আমি নিজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আয়কর আইনে স্পষ্ট করে লেখা আছে, ফ্রিল্যান্সারদের কোনো কর দিতে হবে না। কারণ, তাঁরা তো করের আওতার বাইরে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে যেসব ফ্রিল্যান্সার আয় করছেন, তাঁরা ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা (ক্যাশ ইনসেনটিভ) পাচ্ছেন। এখানে অনেক ব্যাংক আছে। সেসব ব্যাংকের মাধ্যমে তাঁরা পাচ্ছে। আমাদের প্রবাসী যাঁরা রেমিট্যান্স পাঠান, তাঁরা আড়াই শতাংশ প্রণোদনা পান, ফ্রিল্যান্সাররা কিন্তু ৪ শতাংশ পাচ্ছেন।’
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী আজ সকালে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা অনেক সময় অনেক ভুল তথ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। সে রকমই একটা তথ্য আমি আপনাদের সামনে পরিষ্কার করতে চাই। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ ও অর্জনের একটা বড় উৎস হচ্ছে আমাদের আইটি ফ্রিল্যান্সাররা। প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার বছরে প্রায় ১৫০ কোটি ডলার আয় করছেন। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী এর পরিমাণ ৫০ কোটি ডলার। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। তাঁরা আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের কোনো উৎসে কর দিতে হয় না, তাঁরা আয়করের আওতার বাইরে।’
২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগের (এফইপিডি) পরিচালকের সই করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ কর্তৃক ৬ আগস্ট ২০২৩ তারিখে জারিকৃত এফই সার্কুলার পত্র নম্বর ০৮–এর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা যাচ্ছে।
পরের অনুচ্ছদে বলা হয়েছে, আয়কর আইন ২০২৩–এর ১২৪ ধারা (আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪–এর ৫২কিউ) অনুযায়ী সেবা, রেভিনিউ শেয়ারিং ইত্যাদি বাবদপ্রাপ্ত রেমিট্যান্সের ওপর উৎসে কর কর্তন ও জমা প্রদান এবং নির্ধারিত জমা কোডের বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কর কমিশনারের কার্যালয়, কর অঞ্চল–১১ কর্তৃক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এই নির্দেশনা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত অনুমোদিত সব ডিলার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ প্রজ্ঞাপনে ফ্রিল্যান্সারদের কথা না থাকলেও দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ফ্রিল্যান্সারদের ১০ শতাংশ কর দিতে হবে।
পুরো বিষয়টি নিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী আজ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সফল ও অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররাও বলছেন, এই প্রজ্ঞাপন দিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের ওপর কোনো কর আরোপ করা হয়নি।
দিনাজপুরের ফ্রিল্যান্সার মাহামুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের (ফ্রিল্যান্সারদের) গ্রুপগুলোতে যখন ১০ শতাংশ করারোপের সংবাদ দেখতে পেলাম, তখন একটু অবাকই হয়েছিলাম। এই খাত সবে একটা জায়গায় যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য খারাপ লাগার। পরে দেখলাম, বিষয়টি ঠিক নয়। আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে ব্যাখ্যাও পেলাম। এটি আমাদের জন্য স্বস্তির।’