জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

Jamalpurlive

জামালপুরে এক আওয়ামী লীগের নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের চেষ্টা ও জমিতে থাকা দোকানঘর ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই নেতা ও তাঁর সহযোগীদের বিচারের দাবি জানানো হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে শহরের পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় জমির মালিক, তাঁর পরিবার ও এলাকাবাসীর ব্যানারে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে এই দাবি জানানো হয়।

অভিযুক্ত ওই নেতার নাম জাকিরুল ইসলাম। তিনি জামালপুর পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁর বাড়ি শহরের ছনকান্দা এলাকায়। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় জাকিরুল ইসলাম তিন দিন ধরে কারাগারে আছেন। জাকিরুলকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর থেকে তাঁর সহযোগিরা জমির মালিক ও তাঁর পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আজ বেলা একটার দিকে পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় প্রথমে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী। খবর পেয়ে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটুস লরেন্স চিরান ঘটনাস্থলে যান এবং তিনি বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুদ্ধ লোকজন সড়ক থেকে সরে যান।

ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় তাপস আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির পাঁচটি দোকানঘর রয়েছে। হঠাৎ গত বুধবার জাকিরুল ইসলাম ও তাঁর লোকজন এক্সকাভেটর দিয়ে দোকানঘর ভেঙে জমিটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁরা দুটি দোকান ভাঙচুর করেন এবং কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। পরে ভুক্তভোগী পরিবারটির বাধার মুখে তাঁরা সেখান থেকে চলে যান। ওই রাতেই জমির মালিক তাপস আহম্মেদ বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই জাকিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে এবং বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠান।

মামলার বাদী তাপস আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই এলাকায় পৈতৃক সূত্রে পাওয়া আমাদের ১৫ শতাংশ জমিতে পাঁচটি দোকানঘর রয়েছে। দোকানগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে জাকিরুল ইসলাম আমার একটি দোকান ভাড়া নেন। সেখানে তিনি অবৈধ বালু বিক্রির অফিস করেছিলেন। কিন্তু তাঁর লক্ষণ ভালো দেখছিলাম না। তিনি নানাভাবে ওই জমি নেওয়ার জন্যে প্রথমে আমাকে টাকা সাধতেন। তখন থেকেই ওই জমির প্রতি তাঁর দৃষ্টি পড়ে। আমার এক প্রতিবেশীর পরামর্শে তাঁর কাছ থেকে দোকানটি আমি ছাড়িয়ে নিই। তারপর তিনি কৌশলে নাকি আমার বোনের কাছ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে তিন শতাংশ জমি কিনে নিয়েছেন। সেটার কাগজপত্র আমাদের দেখাননি তিনি। হঠাৎ বুধবার দুপুরে সন্ত্রাসীদের নিয়ে আসেন এবং ভেকু (এক্সকাভেটর) দিয়ে দোকানঘর ভাঙতে থাকেন। খবর পেয়ে আমারা সবাই সেখানে যাই এবং বাধা দিই। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা করেছি। তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন। কিন্তু তাঁর লোকজন নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন।’

জাকিরুল ইসলাম কারাগারে থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সঙ্গে জাকিরুল ইসলামের বিষয়ে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাকিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগের বিষয়টি সঠিক নয়। তিনি সেখানে তিন শতক জমি কিনেছেন, এমনটা শুনেছি।’

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ওই ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত একমাত্র আসামি জাকিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্তে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও একজনকে ওই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে বাদীকে হুমকির বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। লিখিতভাবে হুমকির বিষয়টি জানালে অবশ্যই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Jamalpurlive